ব্রাইট স্পেস টিউন সমগ্র: হিমালয় এবং বাংলার দুই গর্বিত সন্তান...
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কালুরঘাট মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ পরিবহনের জন্য একটি জীপ ভাড়া করে দুই বস্তা চাল ও একটি ছাগল নিয়ে যাই কিন্তু তখন তারা পশ্চাদ্বাবন অবস্থায় ছিলেন।ওখানকার একজন সৈনিক আমাদেরকে একটা মর্টার ও তিনটি গোলা দিয়ে দেন।এবং একটি ৩০৩ রাইফেল প্রদান করেন। ইপিসিপি-এর সদস্য হিসেবে আমরা যু্দ্ধের জন্য সংগঠিত ছিলাম। আমার সাথী ছিলেন নুরুল আলম মাস্টার,,গাজীউর রহমান,,নাগু মিয়া,,জালাল আহমদ,,নুরু মোহাম্মদ,,মোহাম্মদ আলম ও আজীজ ড্রাইবারসহ আরো অনেকে।আমরা ওগুলো নিয়ে চলে এসে তরিৎ অপারেশনে নেমে পড়ি।এর পরে সপ্তাহেই আমরা খাসখামা খাসমহাল অপারেশন করি।এবং মর্টার শেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে খাসমহল ভবনের কাগজ-পত্র নষ্ট করি।এর পর বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো অনেকে আমার ইপিসিপি গ্রুপের সাথে যোগ দেয়।এবং আমাদের অভিযান অব্যহত থাকে”— ১নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধের স্মৃতিচারন। নাম তার মাস্টার শামসুল আলম। দেশের প্রতি ভালোবাসার অদম্য ইচ্ছাই ছিলো তার অফুরন্ত প্রানশক্তি
আজ আমাদের স্বাধীনতার ৪০ বছরে এসে বাংলা মায়ের আর এক দামাল ছেলের মুখে উচ্ছারিত হয়েছে সেই এক-ই প্রান্মন্ত্র।
বর্তমানে শুধু আমাদের দেশের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় বিশ্ব প্রাচীরের প্রতিটি পড়তে পড়তেই তার কিংবা তাদের নাম সমুজ্জ্বল। এক সেনানি হলেন ২২মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১শে মে বাংলার আরেক গর্বিত সন্তান এম এ মুহিত নিজ হাতে স্থাপন করেন বাংলার পতাকা এভারেস্ট চূড়ায়।
এম এ মুহিত ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার গঙ্গারাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ’৮৫ সালে পুরান ঢাকার পগোজ স্কুল থেকে এসএসসি, ’৮৭ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে ’৮৯ সালে বি কম পাস করেন। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে তিনি বড়। বর্তমানে মুহিত প্যারাগন গ্রুপের প্যারাগন প্লাস্ট ফাইবারের মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতিপ্রেমী মুহিত পাঠ্যপুস্তকে এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগের এভারেস্ট জয়ের কাহিনী পড়ে প্রথম রোমাঞ্চ অনুভব করতেন। ’৯৭ সালের অক্টোবরে ১০ বন্ধুর সঙ্গে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বন্ধুদের মধ্যে প্রথম ১৮শ’ ফুট উচ্চতায় উঠে পর্বতারোহণ নেশায় মগ্ন হন তিনি। ২০০৩ সালে সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হকের কাছ থেকে ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফিতে হাতেখড়ি নেন। ইনাম আল হক তাকে স্বপ্ন দেখান হিমালয় জয়ের। ২০০৩ সালে ইনাম আল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। সদস্য হন মুহিত। ২০০৪ সালে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ও কালাপাথার ট্রেকিংয়ে অংশ নেন এবং দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট এইচএমআই থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০৫ সালে উচ্চতর পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর জয় করতে থাকেন বিভিন্ন পর্বতশৃঙ্গ।
২০০৭ সালের মে মাসে নেপালের অন্নপূর্ণা হিমালয় অঞ্চলের চুলূ ওয়েস্ট শৃঙ্গের ২১ হাজার ৫৯ এবং সেপ্টেম্বর মাসে মেরা পর্বতশৃঙ্গের ২১ হাজার ৮শ’ ৩০ ফুট, ২০০৮ সালের মে মাসে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মানাসলুর ২৬ হাজার ৭শ’ ৮০ ফুট এবং ২০০৯ সালে দলনেতা হিসেবে নেপাল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত বিশ্বের ষষ্ঠ উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ চো ইয়ো জয় করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশী ২৬ হাজার ৯০৬ ফুট বা ৮ হাজার ২০১ মিটার পর্বতারোহীদের সম্মানজনক এলিট ক্লাবে প্রবেশ করেন।গত মার্চের শেষ সপ্তাহে মুহিত অন্য সফরসঙ্গীর সঙ্গে হিমালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। ২৫ মার্চ তারা ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা জানান।
এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার আগ মুহূর্তে মুহিত বলেছিলেন, একটা পাহাড়ে ওঠার পর যে রোমাঞ্চ হয় তার সঙ্গে আমি অন্য কিছুর তুলনা করতে পারি না। তিনি বলেন, আমি যখন কোনো পর্বতে উঠি আর ভাবি আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তখন আমার মানসিক শক্তি বেড়ে যায়। পর্বতে উঠতে হলে শারীরিক শক্তির চেয়ে মানসিক শক্তিটাই বেশি দরকার। মুহিত আরও বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় আমি বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে যাচ্ছি এটাই আমাকে বাড়তি প্রেরণা যোগাচ্ছে। পতাকার শক্তি যে অনেক বড় শক্তি এটা আমি সব সময় অনুভব করেছি।
নির্ধিদায় এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন, ৭১ এ এমন লাখো সেনানীরা যুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। যেখানে আমাদের দেশই গড়া হয়েছে ভালোবাসার বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে, সেখানে সেই দেশের ভালোবাসাই হবে আমাদের প্রানশক্তি এটাই স্বাভাবিক। আর সেই ভালোবাসার টানই আমাদের নিয়ে যাবে নতুন দিগন্তে। সেই দিন আর বেশি দূরে নয় বাংলার পতাকা উড়বে মহাকাশে, উড়বে চাঁদের ধূসর মাটিতে, বাংলার নাম লেখা থাকবে গভীর সমুদ্রের তলে কোন এক অনাবিষ্কৃত শেওলা ধরা পাথরের গায়ে।মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার শামসুল আলম আজ মাথা উঁচু করে তোমাকে বলতে ইচ্ছে করছে যে তুমি ,তোমরা গর্বিত সন্তানেরা যেমন চেয়েছিলে আজকের প্রজন্ম সেই সিঁড়িপথই বেয়ে যাচ্ছে নিরন্তর নিরলস এবং দেশমাতৃকার প্রবল উদ্দীপনায়।
‘পুরাতনেরা যার যার মতো পাপ-পূণ্যর ভান্ডার পূর্ণ করে ঝড়ে পড়ছে।নতুনেরা তাদের স্থান দখল করছে।তারাই অনাগত দিনের আশার আলো।তাদের দেশপ্রেম,,,মুক্তবুদ্ধি,,,কুসংস্কারমুক্ত চেতনা ও মানবপ্রেমে নব জীবনের সূচনা করবে। অনিরুদ্ধস্রোত দ্বারা পুরাতনের সমস্ত দীনতা-হীনতা,,জীর্ণ আবর্জনা দূরীভূত করে সমাজকে নতুন জীবনালোকে উদ্ভাসিত করবে।কিন্তু তাদের হতে হবে দেশপ্রেমিক,,মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা শাণিত সৈনিক’”।
একটি দিনের স্বপ্ন সবসময় দেখি, যেদিন সূর্যদয়ের সোনালি কিরনে এক ঝাঁক বীরের ঘুম ভাঙবে, তাদের ঘিরে চারদিকে ধন্য ধন্য রব উঠবে, আর সেদিন আপনাদের মত আমিও হব এক গর্বিত পিতার সন্তান। সেই দিন আমরা সবাই হব বিজয়ের দৃপ্ত চেতনার শানিত সৈনিক। খোদা হাফেজ।
আমাকে খুজে পাবেন এই পরিবারে